#বুক_রিভিউ
#inspiringmillion #Bangladesh #StoryOfInspirations #Bangladesh #BijoyDibosh #nationalvictoryday #victoryday #16thDecember #49YearsOfVictory
নামঃ জান্নাতুল মাওয়া শাহারিয়া
প্রতিষ্ঠানঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
ইমেইলঃ jannatulmouya3399@gmail.com
বইঃ মা
লেখক: আনিসুল হক
প্রকাশনঃ সময়
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
ছবিঃ সংগ্রহীত
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ২০০৩
পৃষ্ঠা : ৩১৭
"যদি আমি পৃথিবীতে তোমার দোয়ায় বড় বা নামকরা কেউ হতে পারি, তবে পৃথিবীর সবাইকে জানাব তোমার জীবনী, তোমার কথা"
-শহীদ মাগফার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী আজাদ
হয়তো নিজে জীবিত থাকাকালীন মায়ের কথা পৃথিবীর সকলকে জানানো সম্ভব হয় নি ; তবে মায়ের দোয়ায় বড় একজন মানুষ তিনি ঠিকই হয়েছিলেন। মাঝেমাঝে কোনো বই পড়তে গিয়ে কল্পনায় তৈরীকৃত চরিএের জন্য খুব করে মন খারাপ হয় ; আর 'মা' বইটির কাহিনী তো বাস্তব কিছু চরিএ নিয়ে সৃষ্টি! তাহলে একবার ভাবুন এক বইটি পড়তে গিয়ে কতবার গায়ের লোম খাড়া হয়েছে কিংবা চোখের কোণায় জল জমেছে!
পৃথিবীতে 'মা' শব্দটির সাথেই জড়িয়ে রয়েছে হাজারো ত্যাগ তিতিক্ষার গল্প,বহু মমতা এবং বিসর্জনের গল্প। ঠিক তেমনই একজন মাকে নিয়ে লিখেছেন আনিসুল হক। এমন একজন মা যিনি সন্তানকে ভালোবেসেছিলেন ; সাথে সন্তানকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন মা রূপী দেশকেও।
'আজাদের মা মারা গেছে গতকাল বিকেলে, পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে আজাদের ধরা পড়ার ঠিক ১৪ বছরের মাথায়, একই দিনে।'
এভাবেই শুরু হয়েছে আনিসুল হকের লেখা 'মা' উপন্যাসটি।
একজন মানুষ মারা যাওয়ার পরও সকলের মনে অন্যরকম প্রভাব বিস্তার করে পারেন কখন বলতে পারেন? ঠিক তখনই যখন সেই মানুষটা বেঁচে থাকাকালীন এমন কিছু স্মৃতি রেখে যায় যা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয় সেই মানুষটার উপস্থিতি। সাফিয়া বেগম ঠিক এমনই একজন রত্নগর্ভা,তিনি আজাদের মা,তিনি ক্র্যাক প্লাটুনের আজাদের মা,তিনি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আজাদের মা।
সম্ভ্রান্ত পরিবারে বেড়ে উঠা আজাদ জননীর বিয়ে হয়েছিল বড়লোক ইঞ্জিনিয়ার বাবার সাথে। স্বামী সংসার নিয়ে ইস্কাটনের বাড়িতে বেশ যাচ্ছিলো সুখের সংসার ;কিন্তু, সেই সুখ ঘরেই বোধহয় সর্বনাশের পোকা বাসা বাঁধে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের খবর। যে দেশে নিজের সামান্য স্বার্থের জন্য বহু মানুষ দেশ বেঁচে দিতে প্রস্তুত ছিলো পাকিস্তানি শাসকদের কাছে; সে দেশেই আজাদের আত্মসম্মান বজায় রাখা মা ছেলের হাত ধরে বেড়িয়ে আসলেন অর্থবিত্তের সাম্রাজ্য থেকে এক নতুন জীবনের খুঁজে। তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যুদ্ধ করে গিয়েছিলেন বাস্তবতার সাথে; তবে মা ছোটো হননি কখনওই। ছেলের ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা করা মা হাজারো বাধা সত্ত্বেও হেরে যান নি কখনওই।ছেলেকে করেছিলেন সুশিক্ষিত ; ঠিক তেমনি ছেলেকে শিখিয়েছিলেন দেশপ্রেম।
যুদ্ধের সেই সময়টা বড় ব্যাকুল করে তুলেছিল আজাদকে। দেশ স্বাধীনের যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নিজের মনের সাথেই চলছিলো তার যুদ্ধ। কিন্তু এক দিকে দেশের জন্য কিছু করার আকুলতা , অন্যদিকে মায়ের প্রতি দায়িত্ববোধ।কিন্তু, আজাদের মা ই তাকে উদ্ধার করলেন। বললেন-
"আমি কি তোকে শুধু আমার জন্যই মানুষ জন্যই মানুষ করেছি। এদেশটা ও তোর মা। যা দেশটাকে স্বাধীন করে আয়।"
মা! শব্দটির গভীরতা আসলেই বিশাল ; হাজার চিন্তা করেও হয়তো মা শব্দটির গভীরতা কেও বোঝার ক্ষমতা রাখে না। ছেলেকে যুদ্ধে পাঠিয়েই এই মা বসে থাকেন নি; নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছিলেন তিনি।বহু গেরিলা যুদ্ধে সামনে থেকে নির্ভীক সৈনিকের মতো জয় ছিনিয়ে আনা আজাদ ১৯৭১ এর ২১ শে আগস্ট বাংলার ইতিহাসের কলংকিত সন্তান রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন রুমি, বদি, আলতাফ মাহমুদ সহ। ধরা পড়ার পর থেকেই চলে নির্যাতন;কিন্তু তারা যে সেই সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। ভয়ে পিছু হটা যে তাদের স্বভাবে নেই।
"মা কী করব? এরা খুব মারে। সবার নাম বলে দিতে বলে।"
তিনি ছেলেকে বুঝালেন এটা করা যাবেনা আর বললেন-
"বাবারে, যখন মারবে তুমি শক্ত হয়ে থেকো, সহ্য করো। কারো নাম যেন বলে দিও না।"
আজাদের মা এমনই একজন মা। সন্তানের জন্য মায়া তার ঠিকই ছিলো;সাথে হাজারো মায়ের সন্তানের জন্য তার চিন্তা। আজাদ নাম বলে নি কারও। কথায় কথায় মাকে বলেছিলো দুইদিন ভাত না খেতে পারার কথা; পরেরবার আসতে ভাত নিয়ে আসার আকুতি ছিলো। মা ঠিকই ভাত নিয়ে গিয়েছিলেন ; তবে ছেলের সাথে তাঁর দেখা হয় নি। আজাদের মা তাই তার বাকি চৌদ্দটি বছর ভাত খাওয়ার সাহস করেননি। হাঁপানী রোগী হওয়া সত্ত্বেও মা শীত কিংবা গরমে খাটে শোন নি ; কারণ ছেলে যে জেলখানায় মাদুর বিছিয়ে ঘুমিয়েছিলো। এই মা,তিনি সাফিয়া বেগম,তিনি আজাদের মা।
'আজাদ সত্যি সত্যি বিশ্বাস করো তার মার মতো মা হয় না।বিশ্বাস করে এই মায়ের জীবনী
লিখিত হওয়া উচিত'
আজাদের মায়ের জীবনী লেখা হয়েছে এবং এই সেই জীবনী যা পড়ে দেশের বহু কোণায় বহু মানুষ লুকিয়ে চোখের পানি ঝরায়। এমন একটি বই 'মা' যার প্রতিটি পাতায় ছিলো সংগ্রাম,প্রতিটি পাতায় ছিলো মুক্তিযুদ্ধের অজানা ইতিহাস। ইতিহাস বিকৃত বা হারিয়ে যাওয়ার এই সময়ে আপনি চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন বহু মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটা আজাদ এবং তার মা কে নিয়ে লেখা আনিসুল হকের 'মা' বইটি।
Comments (1)